বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান আজ একটি মতবিনিময় সভায় সতর্ক করে বলেছেন, নিজের দলসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ করে, তাদের পরিণতি অতীতের চেয়েও করুণ হবে। তিনি বলেন, “আমরা বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ করি, আমাদের সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত, কারণ আল্লাহও ছেড়ে দেবেন না, এবং এ দেশের জনগণও ক্ষমা করবেন না।”
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন তিনি। এই সভাটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা আয়োজন করে, যেখানে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।
শফিকুর রহমানের এই মন্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান আজকের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে ন্যায়বিচারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। ন্যায়বিচার পাওয়া আমাদের অধিকার। সব শহীদ পরিবারকে আহ্বান জানাব, আপনারা অবশ্যই ন্যায়বিচার চাইবেন। জামায়াতে ইসলামী আপনাদের পাশে থেকে আইনের অঙ্গনে লড়াই করবে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ যে সব মানুষকে খুন করেছে, তাদের সবার জন্য ন্যায়বিচার চাই। আদালতের কাছে আমাদের দাবি স্পষ্ট: আমাদের ওপর যেমন জুলুম করা হয়েছে, তেমনটা যেন আওয়ামী লীগের ওপর না হয়। তবে, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের যে শাস্তি পাওয়া উচিত, তা পেতে হবে। যদি ফাঁসি হয়, সেটা হতে হবে। যদি আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়, সেটাও মেনে নিতে হবে। তারা তো বলত, বিচারবিভাগ স্বাধীন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়—তাহলে তারাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
শফিকুর রহমানের এই বক্তব্য ন্যায়বিচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ার দাবি তুলে ধরে। তিনি প্রতিহিংসার পরিবর্তে সুবিচারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং ভবিষ্যতে স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর লক্ষ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব আরোপ করেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান আজকের মতবিনিময় সভায় শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যোগ্যতা অনুসারে প্রতিটি শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ব্যক্তিদের আগামী দিনে সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তারা যদি রাষ্ট্রের সেবা করার সুযোগ পান, তাহলে যেমনভাবে তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তেমনি রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যও অবদান রাখবেন।”
শফিকুর রহমান আরও বলেন, যারা আহত হয়ে এখনো চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলকে আহ্বান জানান যে, তারা যেন এসব আহত ব্যক্তিদের সহায়তা করে।
তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান, যাতে বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম জানতে পারে কীভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়েছে এবং কারা সেই লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।
মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও বক্তব্য দেন। এতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম, এবং আরও বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন।
সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন এবং তারা তাদের স্বজনদের হত্যার বিচার দাবি করেন। এই মতবিনিময় সভা রাজনৈতিক অঙ্গনে ন্যায়বিচারের দাবি এবং অতীতের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরে।