ইরানের হামলায় দুই সেনা নিহত হলেও সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। হামলার আগে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম জানিয়ে সতর্ক করেছিল। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, ইরাক, আরব আমিরাত এবং সিরিয়া, কারণ এই ধরনের সংঘাত পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গতকাল শনিবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের তিনটি প্রদেশের সামরিক স্থাপনায় তিন দফা বিমান হামলা চালায়। ইরানের ১ অক্টোবরের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয় বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কারাজ ও মাশহাদ শহরে সাতটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরান দাবি করেছে, এই হামলায় তাদের দুই সেনাসদস্য নিহত এবং সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েল ইরানকে আরও হামলা চালাতে সতর্ক করেছে, যদিও তারা কোনো তেলক্ষেত্র বা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়নি। ইরান পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে, তারা নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার রাখে, যা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী শনিবার ভোরে ইরানে চালানো বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরির বিভিন্ন স্থাপনা এবং আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় তিন দফায় হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযানের সাংকেতিক নাম ছিল ‘ডেস অব রিপেনট্যান্স’ বা অনুতাপের দিন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলায় বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল, এবং অভিযান শেষে সব বিমান নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।
এই হামলার আগে কখনোই ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানে হামলার বিষয়টি স্বীকার করেনি। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূগর্ভস্থ একটি বাংকার থেকে এই হামলার পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন
ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বিভাগের মতে, ইসরায়েল তেহরান, খোজেস্তান ও ইলাম প্রদেশের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, এতে কিছু জায়গায় সীমিত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এর ঘাঁটিতেও হামলা হয়, তবে সেখানে গুরুতর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিম।
হামলার আগে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি জানিয়েছিল, যদিও যুক্তরাষ্ট্র হামলায় সরাসরি অংশ নেয়নি। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ইসরায়েলের এই হামলাকে “সুনির্দিষ্ট ও আনুপাতিক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং পাল্টা আক্রমণ এড়িয়ে সরাসরি সংঘাতের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, ইরান পাল্টা আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে
ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করে এবং আগ্রাসনের যথাযথ জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আইআরজিসি ইঙ্গিত দিয়েছে, ইসরায়েলি হামলাকে যদি সীমিত মনে করা হয় এবং তাতে বড় ধরনের হতাহত না হয়, তবে ইরানের পাল্টা হামলার সম্ভাবনা কম।
ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশের নেতারা মতামত জানিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন যে, ইরানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে, তবে তিনি আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে না দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, সৌদি আরব ইসরায়েলের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত বলে নিন্দা জানিয়েছে।
মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, হামাস, হিজবুল্লাহ, এবং পাকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশও ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করেছে, যা এই অঞ্চলে উত্তেজনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।